সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার ঢাকাস্থ চান্দিনা ছাত্র কল্যাণ সমিতির ২০২৫–২৬ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা উইন্ডোজের বিকল্প অপারেটিং সিস্টেম আনছে গুগল, পিসিতেই মিলবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস: নিহত প্রায় ৬০০, নিখোঁজ শতাধিক দেবিদ্বারে গাঁজাসহ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক কুমিল্লা ফুডপান্ডায় নিয়োগ, অভিজ্ঞতা ছাড়াও আবেদনের সুযোগ বুড়িচংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ দুটি ঘর পুড়ে ছাই শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা অবস্থা ‘অপরিবর্তিত’ এখনও ‘শঙ্কামুক্ত নন’ বেগম খালেদা জিয়া মঞ্চে লাল গালিচার ব্যবহার কীভাবে এলো? জানুন এর ইতিহাস

প্রবাস জীবনের স্বপ্নভঙ্গ: ‘ফ্রি ভিসা’র ফাঁদে মালদ্বীপে বিপাকে শত শত বাংলাদেশি

বিদেশে গিয়ে স্বপ্নপূরণের বদলে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে মালদ্বীপে পাড়ি জমানো শত শত বাংলাদেশির জীবন। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে, কেউ সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে মালদ্বীপে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু পৌঁছানোর পরই তারা বুঝতে পারছেন—‘ফ্রি ভিসা’ নামের কোনো সুযোগ আসলে ছিলই না, ছিল শুধু প্রতারণার ফাঁদ।

দালালের ফাঁদে প্রবাস জীবন দুর্বিষহ, সম্প্রতি মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের একাংশ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের অধিকাংশই দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ‘ফ্রি ভিসা’ বা উন্মুক্ত ভিসার প্রলোভনে পা দিয়ে দেশটিতে এসেছেন। কিন্তু মালদ্বীপের আইন অনুযায়ী, এ ধরনের ভিসা অবৈধ—এবং একমাত্র নিয়োগপ্রাপ্ত কোম্পানিতেই কাজ করার বিধান রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ফ্রি ভিসা’ বলতে মালদ্বীপের আইনে কিছুই নেই। কিছু কোম্পানি যখন তাদের বরাদ্দকৃত কর্মী কোটা পূরণ করতে পারে না, তখন নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ থাকে। এই আইনি ফাঁকটিকে ব্যবহার করে অসাধু দালাল চক্র ‘ফ্রি ভিসা’র নামে বিদেশগামীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সরকারিভাবে ভিসা খোলা, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নেই ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সীমিত পরিসরে ভিসা চালু করে। পরবর্তীতে অবৈধ নিয়োগ ও অপব্যবহারের কারণে ২০২৪ সালে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২৫ সালের মার্চে দ্বিতীয় দফায় দক্ষ-অদক্ষ কর্মীদের জন্য নিয়ন্ত্রিত ভিসা চালুর অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে এই সুযোগেরও অপব্যবহার করছে কিছু দালাল চক্র, যাদের পেছনে প্রভাবশালী কিছু বাংলাদেশির হাত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তারা কাজের নিশ্চয়তা ছাড়াই শ্রমিক পাঠিয়ে দিচ্ছে মালদ্বীপে।

কর্মসংস্থান নেই, ফেরার পথও অনিশ্চিত ‘ফ্রি ভিসা’য় মালদ্বীপে এসে অনেকে দেখতে পান, তাদের নিয়োগদাতা কোনো কাজই দেয় না। ফলে বাধ্য হয়ে অন্যত্র কাজ করতে যান, যা শ্রম আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে জেল, জরিমানা এবং তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরত পাঠানোর মতো কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

মালদ্বীপ সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে—যেসব প্রবাসী নির্ধারিত নিয়োগকর্তার বাইরে কাজ করছেন, তাদের অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অভিবাসন পুলিশের অভিযানে বহু বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং অনেকে অপেক্ষায় আছেন দেশে ফেরার।

ভিসা থাকলেও বৈধতা নেই, স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসেই মালদ্বীপ সরকার ১১ হাজারের বেশি ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু করেছে, যার একটি বড় অংশ পেয়েছেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু দালালদের ফাঁদে পড়ে এদের অনেকেই এখন কাজ হারিয়ে আইনের চোখে অবৈধ হয়ে গেছেন।

হাইকমিশনের সতর্কতা ও পরামর্শ

মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) মো. সোহেল পারভেজ বলেন,

“ফ্রি ভিসা বলতে কিছুই নেই। প্রতারণা রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিচিত কেউ থাকলে তার মাধ্যমে যাচাই করে আসা উচিত। প্রয়োজন হলে হাইকমিশনের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন।”

তিনি আরও জানান,

“যে কোম্পানির ভিসা, সেই কোম্পানি ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করলে তা গুরুতর অপরাধ। অনেকেই এখন দেশে ফেরার ঝুঁকিতে আছেন।”

বৈধ শ্রমিকদেরও সমস্যায় ফেলছে ‘ফ্রি ভিসা’ধারীরা মালদ্বীপে বৈধভাবে কর্মরত বাংলাদেশিরা জানান, এই ফ্রি ভিসায় আসা শ্রমিকদের কারণে তাদেরকেও হয়রানি ও সন্দেহের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই তারা চান, সরকার দ্রুত এই প্রতারণামূলক ভিসা পদ্ধতি বন্ধ করুক।

সরকার কী করবে? জনশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় হলেও, অব্যবস্থাপনার কারণে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছে দেশ। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে মালদ্বীপসহ অন্যান্য বাজারেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা।

বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে যাওয়ার আগে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য যাচাই করুন। দালালের প্রলোভনে পড়ে যেন জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল না হয়—সেই সচেতনতা জরুরি।

চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার

প্রবাস জীবনের স্বপ্নভঙ্গ: ‘ফ্রি ভিসা’র ফাঁদে মালদ্বীপে বিপাকে শত শত বাংলাদেশি

৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৩

বিদেশে গিয়ে স্বপ্নপূরণের বদলে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে মালদ্বীপে পাড়ি জমানো শত শত বাংলাদেশির জীবন। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে, কেউ সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে মালদ্বীপে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু পৌঁছানোর পরই তারা বুঝতে পারছেন—‘ফ্রি ভিসা’ নামের কোনো সুযোগ আসলে ছিলই না, ছিল শুধু প্রতারণার ফাঁদ।

দালালের ফাঁদে প্রবাস জীবন দুর্বিষহ, সম্প্রতি মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের একাংশ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের অধিকাংশই দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ‘ফ্রি ভিসা’ বা উন্মুক্ত ভিসার প্রলোভনে পা দিয়ে দেশটিতে এসেছেন। কিন্তু মালদ্বীপের আইন অনুযায়ী, এ ধরনের ভিসা অবৈধ—এবং একমাত্র নিয়োগপ্রাপ্ত কোম্পানিতেই কাজ করার বিধান রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ফ্রি ভিসা’ বলতে মালদ্বীপের আইনে কিছুই নেই। কিছু কোম্পানি যখন তাদের বরাদ্দকৃত কর্মী কোটা পূরণ করতে পারে না, তখন নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ থাকে। এই আইনি ফাঁকটিকে ব্যবহার করে অসাধু দালাল চক্র ‘ফ্রি ভিসা’র নামে বিদেশগামীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সরকারিভাবে ভিসা খোলা, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নেই ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সীমিত পরিসরে ভিসা চালু করে। পরবর্তীতে অবৈধ নিয়োগ ও অপব্যবহারের কারণে ২০২৪ সালে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২৫ সালের মার্চে দ্বিতীয় দফায় দক্ষ-অদক্ষ কর্মীদের জন্য নিয়ন্ত্রিত ভিসা চালুর অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে এই সুযোগেরও অপব্যবহার করছে কিছু দালাল চক্র, যাদের পেছনে প্রভাবশালী কিছু বাংলাদেশির হাত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তারা কাজের নিশ্চয়তা ছাড়াই শ্রমিক পাঠিয়ে দিচ্ছে মালদ্বীপে।

কর্মসংস্থান নেই, ফেরার পথও অনিশ্চিত ‘ফ্রি ভিসা’য় মালদ্বীপে এসে অনেকে দেখতে পান, তাদের নিয়োগদাতা কোনো কাজই দেয় না। ফলে বাধ্য হয়ে অন্যত্র কাজ করতে যান, যা শ্রম আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে জেল, জরিমানা এবং তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরত পাঠানোর মতো কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

মালদ্বীপ সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে—যেসব প্রবাসী নির্ধারিত নিয়োগকর্তার বাইরে কাজ করছেন, তাদের অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অভিবাসন পুলিশের অভিযানে বহু বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং অনেকে অপেক্ষায় আছেন দেশে ফেরার।

ভিসা থাকলেও বৈধতা নেই, স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসেই মালদ্বীপ সরকার ১১ হাজারের বেশি ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু করেছে, যার একটি বড় অংশ পেয়েছেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু দালালদের ফাঁদে পড়ে এদের অনেকেই এখন কাজ হারিয়ে আইনের চোখে অবৈধ হয়ে গেছেন।

হাইকমিশনের সতর্কতা ও পরামর্শ

মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) মো. সোহেল পারভেজ বলেন,

“ফ্রি ভিসা বলতে কিছুই নেই। প্রতারণা রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিচিত কেউ থাকলে তার মাধ্যমে যাচাই করে আসা উচিত। প্রয়োজন হলে হাইকমিশনের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন।”

তিনি আরও জানান,

“যে কোম্পানির ভিসা, সেই কোম্পানি ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করলে তা গুরুতর অপরাধ। অনেকেই এখন দেশে ফেরার ঝুঁকিতে আছেন।”

বৈধ শ্রমিকদেরও সমস্যায় ফেলছে ‘ফ্রি ভিসা’ধারীরা মালদ্বীপে বৈধভাবে কর্মরত বাংলাদেশিরা জানান, এই ফ্রি ভিসায় আসা শ্রমিকদের কারণে তাদেরকেও হয়রানি ও সন্দেহের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই তারা চান, সরকার দ্রুত এই প্রতারণামূলক ভিসা পদ্ধতি বন্ধ করুক।

সরকার কী করবে? জনশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় হলেও, অব্যবস্থাপনার কারণে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছে দেশ। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে মালদ্বীপসহ অন্যান্য বাজারেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা।

বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে যাওয়ার আগে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য যাচাই করুন। দালালের প্রলোভনে পড়ে যেন জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল না হয়—সেই সচেতনতা জরুরি।