
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সাইবার প্রতারকরা নিত্যনতুন কৌশলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে সর্বস্বান্ত করছে। সম্প্রতি ‘পুলিশ পরিচয়ে’ মোবাইল ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতারণার এক ভয়াবহ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শাহরিয়ার আলম (৩৮) এবং তানিয়া আহমেদের মতো অনেকেই এই প্রতারণার শিকার হয়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন।
শাহরিয়ারের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা- মে মাসের প্রথম দিকে শাহরিয়ার আলমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। প্রোফাইলে পুলিশের পোশাক পরা ছবি দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে তিনি ফোন ধরেন। অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি নিজেকে এসআই ফারুক পরিচয় দিয়ে জানান, শাহরিয়ারের মোবাইল নম্বর পুলিশের সার্ভারে ঢুকে গেছে এবং সার্ভার থেকে নম্বরটি ডিলিট করতে হবে।
কোনো অপরাধ না করেও কেন তার নম্বর পুলিশের সার্ভারে গেল, এই প্রশ্ন করলে এসআই পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি তাকে একটি কোড মোবাইলে চাপতে বলেন। কোডটি চাপার সঙ্গে সঙ্গেই শাহরিয়ারের মোবাইলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যায় প্রতারকের হাতে। এরপর সেই ব্যক্তি শাহরিয়ারকে এক ঘণ্টা মোবাইল বন্ধ রাখতে বলেন।
শাহরিয়ার মোবাইল বন্ধ করে চালু করার পর দেখেন, ততক্ষণে তার অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে। প্রতারকরা তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিয়া আহমেদও একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ক্লাস করার সময় তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এসপি পরিচয় দিয়ে ফোন করেন এক ব্যক্তি। প্রোফাইলে পুলিশের পোশাক পরা ছবি ছিল। নিজেকে এসপি জসিম পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি জানান, তানিয়ার মোবাইল নম্বর পুলিশের সার্ভারে চলে এসেছে এবং এটি ডিলিট করতে হবে।
তানিয়া নিজের নির্দোষিতা দাবি করলে এসপি পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি তাকে একটি কোড মোবাইলে চাপতে বলেন এবং এরপর ৪০ মিনিট মোবাইল বন্ধ রাখতে বলেন। তানিয়া কোডটি চাপার পর মোবাইল বন্ধ করেন। পরে মোবাইল চালু করে দেখেন, তার নাম ভাঙিয়ে তার পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কীভাবে কাজ করে এই প্রতারণা চক্র? এই সাইবার প্রতারকরা মূলত মানুষের ভয়কে পুঁজি করে। পুলিশের পরিচয় দিয়ে তারা প্রথমে ভুক্তভোগীকে আতঙ্কিত করে তোলে। এরপর মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য একটি বিশেষ কোড চাপতে বলে। এই কোডটি সাধারণত একটি USSD কোড বা IMEI কোড হতে পারে, যা চাপলে মোবাইলের কল ফরওয়ার্ডিং, মেসেজ ফরওয়ার্ডিং, অথবা সরাসরি ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ প্রতারকের কাছে চলে যায়। মোবাইল এক ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় বন্ধ রাখতে বলার কারণ হলো, এই সময়ের মধ্যে প্রতারকরা দ্রুত ভুক্তভোগীর পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে টাকা দাবি করে।
ডিবি পুলিশের সতর্কবার্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হাসান মোহাম্মদ নাছের রিকাবদার জানিয়েছেন, এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ তাদের কাছে আসে। তিনি জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যেই ফোন করুক, কাউকে ওটিপি (One Time Password) দেওয়া যাবে না। আবার কারও কাছ থেকে কোনো কোড নম্বর নিয়ে মোবাইলে সেট করা যাবে না।
প্রতারকরা বিভিন্ন কৌশলে অপরাধ করলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে আর্থিক প্রতারণা। তাই অচেনা কোনো নম্বর থেকে পুলিশের পরিচয় দিয়ে ফোন এলে সতর্ক থাকুন। কোনো রকম কোড চাপতে বা ওটিপি শেয়ার করতে বলা হলে তাৎক্ষণিকভাবে ফোন কেটে দিন এবং নিকটস্থ থানা বা সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করুন।
Reporter Name 














