সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার ঢাকাস্থ চান্দিনা ছাত্র কল্যাণ সমিতির ২০২৫–২৬ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা উইন্ডোজের বিকল্প অপারেটিং সিস্টেম আনছে গুগল, পিসিতেই মিলবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস: নিহত প্রায় ৬০০, নিখোঁজ শতাধিক দেবিদ্বারে গাঁজাসহ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক কুমিল্লা ফুডপান্ডায় নিয়োগ, অভিজ্ঞতা ছাড়াও আবেদনের সুযোগ বুড়িচংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ দুটি ঘর পুড়ে ছাই শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা অবস্থা ‘অপরিবর্তিত’ এখনও ‘শঙ্কামুক্ত নন’ বেগম খালেদা জিয়া মঞ্চে লাল গালিচার ব্যবহার কীভাবে এলো? জানুন এর ইতিহাস

মঞ্চে লাল গালিচার ব্যবহার কীভাবে এলো? জানুন এর ইতিহাস

বিশ্বজুড়ে আভিজাত্য, সম্মাননা ও ক্ষমতার দৃশ্যমান প্রতীক হিসেবে ‘রেড কার্পেট’ বা লালগালিচা আজ সর্বজনবিদিত। রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মঞ্চ কিংবা বিনোদন জগতের জৌলুসপূর্ণ আয়োজন—সর্বত্রই লালগালিচার ব্যবহার এখন একটি প্রতিষ্ঠিত রীতি। তবে আধুনিক সভ্যতায় এর বহুল ব্যবহার দেখা গেলেও, এই প্রথার শেকড় প্রোথিত রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাসে।

ঐতিহাসিক দলিলাদি ও সাহিত্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, লালগালিচায় হাঁটার প্রথাটি অত্যন্ত প্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫৮ অব্দে গ্রিক নাট্যকার ইস্কাইলাস রচিত ‘অ্যাগামেমনন’ ট্র্যাজেডিতে এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। নাটকের কাহিনি অনুযায়ী, ট্রোজান যুদ্ধে বিজয়ী সম্রাট আগামেমনন যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন সম্রাজ্ঞীর নির্দেশে তাঁকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানাতে পথে লাল গালিচা বিছিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আধুনিক যুগের বহু পূর্ব থেকেই রাজকীয় সম্মান প্রদর্শনে লালগালিচার প্রচলন ছিল।

মধ্যযুগীয় ইউরোপে লাল রংকে আভিজাত্য, ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো। সেই সময়ের সামাজিক মর্যাদাবোধের প্রতিফলন দেখা যায় রেনেসাঁ যুগের শিল্পকর্মেও। তৎকালীন বহু চিত্রকর্মে সাধু, সম্রাট এবং উচ্চবংশীয় অভিজাত ব্যক্তিদের পায়ের নিচে লাল গালিচার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যা তাঁদের বিশেষ সামাজিক অবস্থানকে নির্দেশ করত।

আধুনিক যুগে রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে লালগালিচার আনুষ্ঠানিক ব্যবহার শুরু হয় ১৮২১ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো যখন সাউথ ক্যারোলাইনা সফরে যান, তখন তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে লাল গালিচা ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চপদস্থ রাষ্ট্রীয় অতিথিদের সম্মান জানাতে এটি নিয়মিত অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক বছর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে লালগালিচা সংবর্ধনা না দেওয়া নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে কূটনৈতিক অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল, তা এই প্রতীকের গুরুত্বই বহন করে।

বিংশ শতাব্দীতে লালগালিচাকে বিশ্বমঞ্চে গ্ল্যামারাস ও জনপ্রিয় করে তোলার কৃতিত্ব মূলত হলিউডের। চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে তারকারা সমাজের বিশেষ ও অভিজাত শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো তারকাদের সংবর্ধনায় লাল গালিচা ব্যবহৃত হয়। এরপর থেকেই অস্কার, গ্র্যামি বা কানের মতো আন্তর্জাতিক উৎসবগুলোতে লালগালিচা অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

See also  বুড়িচংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ দুটি ঘর পুড়ে ছাই

শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে লালগালিচা আজও তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও আধুনিক আকর্ষণ সমানভাবে ধরে রেখেছে। বর্তমানে এটি কেবল রাষ্ট্রীয় অতিথি বরণের মাধ্যমই নয়, বরং রাজনৈতিক মঞ্চ এবং বিনোদন জগতের সম্মানের সর্বোচ্চ প্রতীক। প্রাচীন গ্রিস থেকে আধুনিক হলিউড লালগালিচার এই দীর্ঘ পথচলা মূলত মানুষের সম্মান ও আভিজাত্যবোধেরই এক রঙিন উপাখ্যান।

চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার

মঞ্চে লাল গালিচার ব্যবহার কীভাবে এলো? জানুন এর ইতিহাস

২৮ নভেম্বর ২০২৫, ৫:৫৯

বিশ্বজুড়ে আভিজাত্য, সম্মাননা ও ক্ষমতার দৃশ্যমান প্রতীক হিসেবে ‘রেড কার্পেট’ বা লালগালিচা আজ সর্বজনবিদিত। রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মঞ্চ কিংবা বিনোদন জগতের জৌলুসপূর্ণ আয়োজন—সর্বত্রই লালগালিচার ব্যবহার এখন একটি প্রতিষ্ঠিত রীতি। তবে আধুনিক সভ্যতায় এর বহুল ব্যবহার দেখা গেলেও, এই প্রথার শেকড় প্রোথিত রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাসে।

ঐতিহাসিক দলিলাদি ও সাহিত্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, লালগালিচায় হাঁটার প্রথাটি অত্যন্ত প্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫৮ অব্দে গ্রিক নাট্যকার ইস্কাইলাস রচিত ‘অ্যাগামেমনন’ ট্র্যাজেডিতে এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। নাটকের কাহিনি অনুযায়ী, ট্রোজান যুদ্ধে বিজয়ী সম্রাট আগামেমনন যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন সম্রাজ্ঞীর নির্দেশে তাঁকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানাতে পথে লাল গালিচা বিছিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আধুনিক যুগের বহু পূর্ব থেকেই রাজকীয় সম্মান প্রদর্শনে লালগালিচার প্রচলন ছিল।

মধ্যযুগীয় ইউরোপে লাল রংকে আভিজাত্য, ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো। সেই সময়ের সামাজিক মর্যাদাবোধের প্রতিফলন দেখা যায় রেনেসাঁ যুগের শিল্পকর্মেও। তৎকালীন বহু চিত্রকর্মে সাধু, সম্রাট এবং উচ্চবংশীয় অভিজাত ব্যক্তিদের পায়ের নিচে লাল গালিচার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যা তাঁদের বিশেষ সামাজিক অবস্থানকে নির্দেশ করত।

আধুনিক যুগে রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে লালগালিচার আনুষ্ঠানিক ব্যবহার শুরু হয় ১৮২১ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো যখন সাউথ ক্যারোলাইনা সফরে যান, তখন তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে লাল গালিচা ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চপদস্থ রাষ্ট্রীয় অতিথিদের সম্মান জানাতে এটি নিয়মিত অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক বছর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে লালগালিচা সংবর্ধনা না দেওয়া নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে কূটনৈতিক অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল, তা এই প্রতীকের গুরুত্বই বহন করে।

বিংশ শতাব্দীতে লালগালিচাকে বিশ্বমঞ্চে গ্ল্যামারাস ও জনপ্রিয় করে তোলার কৃতিত্ব মূলত হলিউডের। চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে তারকারা সমাজের বিশেষ ও অভিজাত শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো তারকাদের সংবর্ধনায় লাল গালিচা ব্যবহৃত হয়। এরপর থেকেই অস্কার, গ্র্যামি বা কানের মতো আন্তর্জাতিক উৎসবগুলোতে লালগালিচা অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

See also  বুড়িচংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ দুটি ঘর পুড়ে ছাই

শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে লালগালিচা আজও তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও আধুনিক আকর্ষণ সমানভাবে ধরে রেখেছে। বর্তমানে এটি কেবল রাষ্ট্রীয় অতিথি বরণের মাধ্যমই নয়, বরং রাজনৈতিক মঞ্চ এবং বিনোদন জগতের সম্মানের সর্বোচ্চ প্রতীক। প্রাচীন গ্রিস থেকে আধুনিক হলিউড লালগালিচার এই দীর্ঘ পথচলা মূলত মানুষের সম্মান ও আভিজাত্যবোধেরই এক রঙিন উপাখ্যান।