
ছালাউদ্দিন রিপনঃ
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন দলের নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি। সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (সাবেক এমপি), সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ (সাবেক এমপি), মাওলানা আবদুল হালিম, এডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, জনাব সাইফুল আলম খান মিলন, জনাব আব্দুর রব, জনাব মোবারক হোমাইনসহ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
রাজনৈতিক সংকট ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রসঙ্গ- লিখিত বক্তব্যে ডা. তাহের বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করেন। সেই সময়ে প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হয়। পরবর্তীতে জনগণের অভিপ্রায় ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, অতীতে কর্তৃত্ববাদী শাসন, ভিন্নমত দমন, দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ে। তাই সংস্কার অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিশন গঠন করে সংস্কারের প্রস্তাব তৈরি করা হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার দাবি- জামায়াতের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য দলটি শুরু থেকেই জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। এই সনদের আইনগত স্বীকৃতি না দিলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে বলেও সতর্ক করে দলটি।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতের অবস্থান- সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি ও অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরির জন্য পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের জোর দাবি জানায় জামায়াতে ইসলামী।
ঘোষিত ৫ দফা দাবি- ১. জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
২. জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে।
৩. অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. স্বৈরাচারী সরকারের আমলে সংঘটিত জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করতে হবে।
৫. স্বৈরশাসনের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা – দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে— ১৮ সেপ্টেম্বর: রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল।
১৯ সেপ্টেম্বর: দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল।
২৬ সেপ্টেম্বর: সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল।
ডা. তাহের বলেন, জনগণের দাবি উপেক্ষা করা হলে গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।
Reporter Name 













