সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার ঢাকাস্থ চান্দিনা ছাত্র কল্যাণ সমিতির ২০২৫–২৬ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা উইন্ডোজের বিকল্প অপারেটিং সিস্টেম আনছে গুগল, পিসিতেই মিলবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস: নিহত প্রায় ৬০০, নিখোঁজ শতাধিক দেবিদ্বারে গাঁজাসহ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক কুমিল্লা ফুডপান্ডায় নিয়োগ, অভিজ্ঞতা ছাড়াও আবেদনের সুযোগ বুড়িচংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ দুটি ঘর পুড়ে ছাই শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা অবস্থা ‘অপরিবর্তিত’ এখনও ‘শঙ্কামুক্ত নন’ বেগম খালেদা জিয়া মঞ্চে লাল গালিচার ব্যবহার কীভাবে এলো? জানুন এর ইতিহাস

শাহীন-৩ ও মুলতান ক্যান্টনমেন্ট: দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

লেখক- রাসেল খাঁন

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সামরিক কৌশল এবং ভারতের নিরাপত্তা প্রস্তুতি বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সাম্প্রতিক তথ্য ও বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পাকিস্তানের মুলতান শহর এক কৌশলগত সামরিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে। এই মুলতান ক্যান্টনমেন্ট এবং সংলগ্ন ফরওয়ার্ড অপারেটিং এয়ার বেসে যদি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল ‘Shaheen-III’ মোতায়েন করা হয়, তাহলে তা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।

মুলতানের ভূ-সামরিক গুরুত্ব-

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শহরে অবস্থিত ‘মুলতান ক্যান্টনমেন্ট’ দেশটির অন্যতম বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ সেনাঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই ঘাঁটি পাকিস্তান আর্মির II Corps এর সদর দফতর, যা কৌশলগত দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সামরিক পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে। শুধু তাই নয়, মুলতান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ১০,০০০ ফুট দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে, যেটি ফরওয়ার্ড অপারেটিং বেস হিসেবে সামরিক উড়োজাহাজ এবং ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চিংয়ের জন্য উপযুক্ত।

Shaheen-III: পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল

Shaheen-III হলো পাকিস্তানের একটি মোবাইল লঞ্চ যোগ্য মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (MRBM)। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

পাল্লা: সর্বোচ্চ ২৭৫০ কিলোমিটার

গতি: Mach 18 (প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২২,২৩০ কিমি)

উচ্চতা: প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার

পেলোড: প্রচলিত ও পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র বহনে সক্ষম

লঞ্চ মাধ্যম: মোবাইল লঞ্চার (নির্দিষ্ট লঞ্চ প্যাড ছাড়াই উৎক্ষেপণযোগ্য)

এই মিসাইলের এত উচ্চ গতি ও পাল্লার ফলে পাকিস্তান চাইলে মুলতান থেকে ভারতের যেকোনো অংশে— এমনকি সবচেয়ে পূর্বপ্রান্ত অরুণাচল প্রদেশেও—মাত্র ৭.৩ মিনিটের মধ্যে আঘাত হানতে সক্ষম।

ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং S-400 এর সীমাবদ্ধতা-

ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার অন্যতম ভরসা হলো রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত S-400 Triumf। এটি একটি আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং কিছু ব্যালিস্টিক মিসাইল ধ্বংসে সক্ষম। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে আক্রমণকারী মিসাইলের গতি ও উচ্চতার ওপর।

S-400 সিস্টেম সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৮,০০০ কিমি গতি এবং ৬০ কিমি উচ্চতায় থাকা টার্গেটের শেষ পর্যায়ে প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু Shaheen-III মিসাইলের গতি প্রায় ২২,২৩০ কিমি এবং উচ্চতা প্রায় ৭০০ কিমির কাছাকাছি, যা S-400 এর ক্ষমতার বাইরে। এর মানে হলো—এই মিসাইল যদি উৎক্ষেপণ করা হয়, তাহলে সেটিকে মাঝপথে প্রতিহত করার ভারতীয় সক্ষমতা খুবই সীমিত। সফলভাবে ঠেকানোর সম্ভাবনা ৫০ শতাংশেরও কম।

See also  বাংলাদেশের কারণে কাঁদছে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকরা

কৌশলগত বার্তা ও আঞ্চলিক উদ্বেগ-

মুলতান ক্যান্টনমেন্টে যদি Shaheen-III মোতায়েন করা হয়, তাহলে তা ভারতের জন্য কেবল একটি প্রতীকী হুমকিই নয়, বরং একটি বাস্তব ও তাৎক্ষণিক সামরিক চ্যালেঞ্জ।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি (৫৮৩ কিমি), কলকাতা (১৮০০ কিমি), চেন্নাই (২৫০০ কিমি)—সবগুলোই এই মিসাইলের নাগালের মধ্যে পড়ে। এর ফলে ভারতকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা উস্কানিমূলক বক্তব্য পুরো অঞ্চলকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই এই বাস্তবতায় কূটনৈতিক সংলাপ, পারস্পরিক আস্থা ও তথ্য আদান-প্রদান একান্ত প্রয়োজন।

পাকিস্তান যদি মুলতান ক্যান্টনমেন্টকে ব্যালিস্টিক মিসাইলের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, তবে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের জন্য এটি এক গুরুতর সতর্কতা।

একইসঙ্গে, এটি গোটা উপমহাদেশের জন্যও এক নতুন নিরাপত্তা বাস্তবতা। যুদ্ধ নয়, সংলাপ—এই মূলনীতিতে দুই রাষ্ট্র যদি অটল থাকে, তবেই এই অঞ্চল শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ থাকবে।

চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার

শাহীন-৩ ও মুলতান ক্যান্টনমেন্ট: দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

৮ মে ২০২৫, ৫:৪২

লেখক- রাসেল খাঁন

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সামরিক কৌশল এবং ভারতের নিরাপত্তা প্রস্তুতি বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সাম্প্রতিক তথ্য ও বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পাকিস্তানের মুলতান শহর এক কৌশলগত সামরিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে। এই মুলতান ক্যান্টনমেন্ট এবং সংলগ্ন ফরওয়ার্ড অপারেটিং এয়ার বেসে যদি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল ‘Shaheen-III’ মোতায়েন করা হয়, তাহলে তা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।

মুলতানের ভূ-সামরিক গুরুত্ব-

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শহরে অবস্থিত ‘মুলতান ক্যান্টনমেন্ট’ দেশটির অন্যতম বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ সেনাঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই ঘাঁটি পাকিস্তান আর্মির II Corps এর সদর দফতর, যা কৌশলগত দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সামরিক পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে। শুধু তাই নয়, মুলতান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ১০,০০০ ফুট দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে, যেটি ফরওয়ার্ড অপারেটিং বেস হিসেবে সামরিক উড়োজাহাজ এবং ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চিংয়ের জন্য উপযুক্ত।

Shaheen-III: পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল

Shaheen-III হলো পাকিস্তানের একটি মোবাইল লঞ্চ যোগ্য মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (MRBM)। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

পাল্লা: সর্বোচ্চ ২৭৫০ কিলোমিটার

গতি: Mach 18 (প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২২,২৩০ কিমি)

উচ্চতা: প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার

পেলোড: প্রচলিত ও পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র বহনে সক্ষম

লঞ্চ মাধ্যম: মোবাইল লঞ্চার (নির্দিষ্ট লঞ্চ প্যাড ছাড়াই উৎক্ষেপণযোগ্য)

এই মিসাইলের এত উচ্চ গতি ও পাল্লার ফলে পাকিস্তান চাইলে মুলতান থেকে ভারতের যেকোনো অংশে— এমনকি সবচেয়ে পূর্বপ্রান্ত অরুণাচল প্রদেশেও—মাত্র ৭.৩ মিনিটের মধ্যে আঘাত হানতে সক্ষম।

ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং S-400 এর সীমাবদ্ধতা-

ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার অন্যতম ভরসা হলো রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত S-400 Triumf। এটি একটি আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং কিছু ব্যালিস্টিক মিসাইল ধ্বংসে সক্ষম। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে আক্রমণকারী মিসাইলের গতি ও উচ্চতার ওপর।

S-400 সিস্টেম সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৮,০০০ কিমি গতি এবং ৬০ কিমি উচ্চতায় থাকা টার্গেটের শেষ পর্যায়ে প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু Shaheen-III মিসাইলের গতি প্রায় ২২,২৩০ কিমি এবং উচ্চতা প্রায় ৭০০ কিমির কাছাকাছি, যা S-400 এর ক্ষমতার বাইরে। এর মানে হলো—এই মিসাইল যদি উৎক্ষেপণ করা হয়, তাহলে সেটিকে মাঝপথে প্রতিহত করার ভারতীয় সক্ষমতা খুবই সীমিত। সফলভাবে ঠেকানোর সম্ভাবনা ৫০ শতাংশেরও কম।

See also  বাংলাদেশের কারণে কাঁদছে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকরা

কৌশলগত বার্তা ও আঞ্চলিক উদ্বেগ-

মুলতান ক্যান্টনমেন্টে যদি Shaheen-III মোতায়েন করা হয়, তাহলে তা ভারতের জন্য কেবল একটি প্রতীকী হুমকিই নয়, বরং একটি বাস্তব ও তাৎক্ষণিক সামরিক চ্যালেঞ্জ।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি (৫৮৩ কিমি), কলকাতা (১৮০০ কিমি), চেন্নাই (২৫০০ কিমি)—সবগুলোই এই মিসাইলের নাগালের মধ্যে পড়ে। এর ফলে ভারতকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা উস্কানিমূলক বক্তব্য পুরো অঞ্চলকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই এই বাস্তবতায় কূটনৈতিক সংলাপ, পারস্পরিক আস্থা ও তথ্য আদান-প্রদান একান্ত প্রয়োজন।

পাকিস্তান যদি মুলতান ক্যান্টনমেন্টকে ব্যালিস্টিক মিসাইলের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, তবে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের জন্য এটি এক গুরুতর সতর্কতা।

একইসঙ্গে, এটি গোটা উপমহাদেশের জন্যও এক নতুন নিরাপত্তা বাস্তবতা। যুদ্ধ নয়, সংলাপ—এই মূলনীতিতে দুই রাষ্ট্র যদি অটল থাকে, তবেই এই অঞ্চল শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ থাকবে।