সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার ঢাকাস্থ চান্দিনা ছাত্র কল্যাণ সমিতির ২০২৫–২৬ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা উইন্ডোজের বিকল্প অপারেটিং সিস্টেম আনছে গুগল, পিসিতেই মিলবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস: নিহত প্রায় ৬০০, নিখোঁজ শতাধিক দেবিদ্বারে গাঁজাসহ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক কুমিল্লা ফুডপান্ডায় নিয়োগ, অভিজ্ঞতা ছাড়াও আবেদনের সুযোগ বুড়িচংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ দুটি ঘর পুড়ে ছাই শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা অবস্থা ‘অপরিবর্তিত’ এখনও ‘শঙ্কামুক্ত নন’ বেগম খালেদা জিয়া মঞ্চে লাল গালিচার ব্যবহার কীভাবে এলো? জানুন এর ইতিহাস

বুড়িগঙ্গার আর্তনাদ: দূষণের দংশনে হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার প্রাণ

 

তাসনীম আলমঃ (দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ, ঢাকা)

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বুড়িগঙ্গা নদী আজ অস্তিত্ব সংকটে। এক সময়ের প্রাণবন্ত ও ঐতিহাসিক এই নদী এখন দখল ও দূষণের কবলে ধুঁকছে। নদীর তীরজুড়ে জমে থাকা প্লাস্টিক, গৃহস্থালি বর্জ্য, শিল্পকারখানার রাসায়নিক ও নানা বিষাক্ত উপাদান নদীর পরিবেশকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

নদীপাড়ের বাস্তব চিত্র; দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে নদীর পানি কালচে, গন্ধে টেকা দায়। নৌকা ও ছোট ছোট ট্রলার নদীর বুক ছেদ করে চললেও জলের স্বচ্ছতা নেই। পানির নিচে জমে থাকা আবর্জনা নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশকে রীতিমতো ধ্বংস করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, “আগে এই নদীতে আমরা গোসল করতাম, মাছ ধরতাম। এখন এই পানির দিকে তাকানো যায় না, গন্ধে নাক-মুখ চেপে চলতে হয়।”

বিপদের ঘণ্টা; পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি পরিবেশবিদদের মতে, বুড়িগঙ্গা এখন একটি “মৃতপ্রায় নদী”। এতে থাকা পানির নমুনায় উচ্চমাত্রায় বিষাক্ত ধাতব পদার্থ, যেমন সীসা, ক্রোমিয়াম ও আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এর ফলে—

  • পানি ব্যবহারকারীরা ডায়রিয়া, চর্মরোগ, এমনকি ক্যানসারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
  • মাছ ও জলজ প্রাণী ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে।
  • নদীকেন্দ্রিক জীবিকা হারাচ্ছেন হাজারো জেলে ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
  • নদীর সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় পর্যটন শিল্পেও ধস নেমেছে।

দখল ও বর্জ্য: দায় কার? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। নদীর দুই তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। অনেক শিল্প-কারখানা কোনো রকম পরিশোধন ছাড়াই বর্জ্য ফেলে দিচ্ছে নদীতে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চললেও তা টেকসই বা কার্যকর নয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান,
“আইন রয়েছে, কিন্তু প্রয়োগে দুর্বলতা রয়েছে। আর জনগণের সচেতনতাও অত্যন্ত জরুরি।”

সমাধানে করণীয়; বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের মতে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে বুড়িগঙ্গা শুধুই একটি নাম হয়ে থাকবে। সমাধানে যা করা যেতে পারে:

  • সচেতনতা বৃদ্ধি: স্থানীয় জনগণকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতন করতে হবে।
  • আইন প্রয়োগ: অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও কারখানাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
  • নদী পরিষ্কার কার্যক্রম: নিয়মিত স্বেচ্ছাশ্রমে নদী পরিষ্কারে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
  • পরিবেশ শিক্ষা: শিশু ও তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশবান্ধব জীবনধারার সঙ্গে পরিচিত করতে হবে।
  • প্লাস্টিক বর্জ্য কমানো: পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে সর্বস্তরে।
See also  অবস্থা 'অপরিবর্তিত' এখনও 'শঙ্কামুক্ত নন’ বেগম খালেদা জিয়া

পরিবেশবিদদের আহ্বান, বুড়িগঙ্গা কেবল একটি নদী নয়, এটি ঢাকা শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জীবনের প্রতিচ্ছবি। এখনই যদি আমরা না জাগি, আগামী প্রজন্মের জন্য থাকবে কেবল বেদনার স্মৃতি।

আসুন, নাগরিক দায়িত্ব পালন করি—পরিচ্ছন্ন বুড়িগঙ্গা, প্রাণবন্ত পরিবেশ গড়ি। সচেতন হোন, সচেতন করুন। পরিবেশ বাঁচান দেশ বাঁচান।

Tag :

চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার

বুড়িগঙ্গার আর্তনাদ: দূষণের দংশনে হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার প্রাণ

২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭:১৩

 

তাসনীম আলমঃ (দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ, ঢাকা)

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বুড়িগঙ্গা নদী আজ অস্তিত্ব সংকটে। এক সময়ের প্রাণবন্ত ও ঐতিহাসিক এই নদী এখন দখল ও দূষণের কবলে ধুঁকছে। নদীর তীরজুড়ে জমে থাকা প্লাস্টিক, গৃহস্থালি বর্জ্য, শিল্পকারখানার রাসায়নিক ও নানা বিষাক্ত উপাদান নদীর পরিবেশকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

নদীপাড়ের বাস্তব চিত্র; দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে নদীর পানি কালচে, গন্ধে টেকা দায়। নৌকা ও ছোট ছোট ট্রলার নদীর বুক ছেদ করে চললেও জলের স্বচ্ছতা নেই। পানির নিচে জমে থাকা আবর্জনা নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশকে রীতিমতো ধ্বংস করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, “আগে এই নদীতে আমরা গোসল করতাম, মাছ ধরতাম। এখন এই পানির দিকে তাকানো যায় না, গন্ধে নাক-মুখ চেপে চলতে হয়।”

বিপদের ঘণ্টা; পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি পরিবেশবিদদের মতে, বুড়িগঙ্গা এখন একটি “মৃতপ্রায় নদী”। এতে থাকা পানির নমুনায় উচ্চমাত্রায় বিষাক্ত ধাতব পদার্থ, যেমন সীসা, ক্রোমিয়াম ও আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এর ফলে—

  • পানি ব্যবহারকারীরা ডায়রিয়া, চর্মরোগ, এমনকি ক্যানসারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
  • মাছ ও জলজ প্রাণী ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে।
  • নদীকেন্দ্রিক জীবিকা হারাচ্ছেন হাজারো জেলে ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
  • নদীর সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় পর্যটন শিল্পেও ধস নেমেছে।

দখল ও বর্জ্য: দায় কার? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। নদীর দুই তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। অনেক শিল্প-কারখানা কোনো রকম পরিশোধন ছাড়াই বর্জ্য ফেলে দিচ্ছে নদীতে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চললেও তা টেকসই বা কার্যকর নয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান,
“আইন রয়েছে, কিন্তু প্রয়োগে দুর্বলতা রয়েছে। আর জনগণের সচেতনতাও অত্যন্ত জরুরি।”

সমাধানে করণীয়; বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের মতে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে বুড়িগঙ্গা শুধুই একটি নাম হয়ে থাকবে। সমাধানে যা করা যেতে পারে:

  • সচেতনতা বৃদ্ধি: স্থানীয় জনগণকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতন করতে হবে।
  • আইন প্রয়োগ: অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও কারখানাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
  • নদী পরিষ্কার কার্যক্রম: নিয়মিত স্বেচ্ছাশ্রমে নদী পরিষ্কারে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
  • পরিবেশ শিক্ষা: শিশু ও তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশবান্ধব জীবনধারার সঙ্গে পরিচিত করতে হবে।
  • প্লাস্টিক বর্জ্য কমানো: পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে সর্বস্তরে।
See also  অবস্থা 'অপরিবর্তিত' এখনও 'শঙ্কামুক্ত নন’ বেগম খালেদা জিয়া

পরিবেশবিদদের আহ্বান, বুড়িগঙ্গা কেবল একটি নদী নয়, এটি ঢাকা শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জীবনের প্রতিচ্ছবি। এখনই যদি আমরা না জাগি, আগামী প্রজন্মের জন্য থাকবে কেবল বেদনার স্মৃতি।

আসুন, নাগরিক দায়িত্ব পালন করি—পরিচ্ছন্ন বুড়িগঙ্গা, প্রাণবন্ত পরিবেশ গড়ি। সচেতন হোন, সচেতন করুন। পরিবেশ বাঁচান দেশ বাঁচান।