
স্টাফ রিপোর্টার, (চান্দিনা)-
কুমিল্লার চান্দিনায় পানির বালতিতে পড়ে মৃত্যুর নাটক সাজিয়ে দুই বছরের শিশু আতীকুল ইসলামকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তার ভাবী খাদিজা আক্তার শিপার বিরুদ্ধে। চার মাস পর মোবাইল ফোনে স্বামীকে দেওয়া স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য ফাঁস হয়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৮ মে চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের আলিকামোড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হিসেবে ধরে নিয়ে শিশুটির দাফন সম্পন্ন হয়। তবে শিশুটির মা হাছিনা আক্তার শুরু থেকেই দুর্ঘটনার বিষয়টি মানতে পারছিলেন না।
চার মাস পর, প্রবাসে থাকা বড় ছেলে হানিফের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথোপকথনে স্ত্রী খাদিজা আক্তার শিপা হত্যার কথা স্বীকার করে বসেন। হানিফ কথোপকথনের রেকর্ড সংরক্ষণ করে দেশে পাঠালে বিষয়টি পরিবারের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
রেকর্ডের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর চান্দিনা থানায় খাদিজা আক্তারকে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন শিশুটির মা হাছিনা আক্তার। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি থানার পক্ষ থেকে ৩০২ ধারায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তবে তদন্তে ময়নাতদন্ত ও ভয়েস রেকর্ডের ফরেনসিক বিশ্লেষণ না করায় মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তদন্তের স্বার্থে মঙ্গলবার (২৭ মে) আদালতের নির্দেশে শিশুটির মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আল নুর।
পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক মো. দিদারুল ফেরদৌস জানান, “মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের পর পুনরায় কবরস্থ করা হয়েছে। কল রেকর্ডটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।”
শিশু আতীকুল ইসলামের মা হাছিনা আক্তার জানান, “আমার বড় ছেলে হানিফের বিয়ের এক মাস পরই সে বিদেশ চলে যায়। ঘটনার দিন আমি পাশের বাড়িতে গেলে আমার ছোট ছেলে আতীক পানি ফেলায় ভাবী তাকে গলা টিপে হত্যা করে। ফিরে এসে অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখি বাথরুমের ছোট বালতির মধ্যে আমার ছেলের মুখ নিচু অবস্থায় পড়ে আছে। আমি তখনই বলেছিলাম, আমার ছেলেকে মারা হয়েছে। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনেনি।”
স্থানীয় বাসিন্দা আঃ কুদ্দুস জানান, “ঘটনার সময় শিশুটির গলায় দাগ দেখা গিয়েছিল। তখন আমরা সেটিকে দুর্ঘটনার অংশ ভেবে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু কল রেকর্ডে সব পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
এ ঘটনায় অভিযুক্ত খাদিজা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
Reporter Name 












