
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী বা সমমনা ৮ দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতার গুঞ্জন যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই দলের ভেতর থেকে জোরালো আপত্তি উঠল। দলটির নীতি ও আদর্শের সঙ্গে জামায়াতের অবস্থান সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে এই সম্ভাব্য জোটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন সদস্য।
শনিবার (আজ) দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে একটি বিস্তারিত স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ এই নেতারা। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা ও দলীয় মূল্যবোধের আলোকে সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তি’ শীর্ষক এই চিঠিতে তারা জামায়াতের সঙ্গে যে কোনো ধরনের সমঝোতাকে দলের জন্য ‘আত্মঘাতী’ বলে উল্লেখ করেছেন।
স্বাক্ষরকারী নেতারা নিজেদের দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানান, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট বা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি তাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। তারা মনে করেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা এবং গণহত্যার মতো অপরাধের দায় দলটিকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনার বিপরীত মেরুতে দাঁড় করিয়েছে। এনসিপির নেতারা স্পষ্ট করে বলেন, এমন একটি দলের সঙ্গে জোট করা এনসিপির রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে।
স্মারকলিপিতে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
বিভাজন ও অপপ্রচার: রাজনৈতিক মাঠে বিভাজন তৈরি করা এবং অন্যান্য দলের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড (স্যাবোটেজ) চালানো।
মিথ্যাচার: ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ (বাগছাস) এবং পরবর্তীতে ‘ছাত্রশক্তি’র বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো।
চরিত্র হনন ও সাইবার বুলিং: দলটির ‘অনলাইন ফোর্স’ ব্যবহার করে এনসিপির নেতাকর্মী, বিশেষ করে নারী সদস্যদের চরিত্রহননের অপচেষ্টা এবং কুরুচিপূর্ণ আক্রমণ।
ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের আশঙ্কা: ধর্মকে ব্যবহার করে সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটানোর প্রবণতা।
এনসিপির এই নেতারা নির্বাচনী কৌশল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেন, শুরুতে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা, দেড় হাজার মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং পরবর্তীতে ১২৫ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর এখন সামান্য কিছু আসনের জন্য জোটের চেষ্টা করাটা জাতির সঙ্গে এক ধরনের ‘প্রতারণা’।
নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নীতিগত জায়গা থেকে সরে এসে জামায়াতের সঙ্গে জোট করলে তা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বেইমানি হবে। তাই দলের স্বার্থে এবং জনমনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে জামায়াতের সঙ্গে যে কোনো প্রকার রাজনৈতিক জোট বা সমঝোতা থেকে বিরত থাকার জন্য তারা আহ্বায়কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অনলাইন ডেস্ক 


















