
চান্দিনা মেইল অনলাইনঃ
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশের মোট ভোটারের প্রায় ১০.৫১ শতাংশ বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন, যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এতদিন ধরে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই বিশাল জনগোষ্ঠী ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকলেও, এবার তাদের ভোট গ্রহণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইসি।
প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন ডাক বিভাগের সহায়তায় পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোট সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচনের আগেই প্রবাসীদের কাছে ব্যালট পাঠানো হবে এবং তারা ডাকযোগে তা ফেরত পাঠাবেন। তবে ভোট গণনা হবে দেশের নির্বাচনের দিনেই। এই পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ।
ভোট দিতে আগ্রহী প্রবাসীদের প্রথমে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সফটওয়্যার বা মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে। মোবাইল অ্যাপটি গুগল প্লে-স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করে ইনস্টল করার পর, একটি পূর্ণাঙ্গ ই-কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করতে হবে।
নিবন্ধনের সময়, এনআইডি যাচাই, মুখের ছবি ও প্রাণবন্ততা যাচাই (Liveliness Detection) ওটিপি ও কিউআর কোডের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ করা হবে! নিবন্ধন সফল হলে, ভোটারের কাছে ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যালট পাঠানো হবে। ব্যালটের সঙ্গে থাকবে একটি ইনস্পেকশন শিট এবং দুটি খাম—একটি ব্যালট পাঠানোর জন্য, অন্যটি ফেরত পাঠানোর জন্য। ভোটার ব্যালট পূরণ করে নির্ধারিত খামে ভরে তা ডাকযোগে ফেরত পাঠাবেন।
প্রবাসীদের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও নিরাপদ করতে নির্বাচন কমিশন একটি ডিজিটাল ভোটিং প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। ‘দেশের বাহিরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো সরাসরি দেশের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ জানিয়েছেন, “প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য আমরা তিনটি খাম ব্যবহার করব। একটি খামে থাকবে ব্যালট ও ইনস্পেকশন, অন্যটি ভোট দেওয়ার জন্য, এবং তৃতীয়টি ফেরত পাঠানোর জন্য। পুরো প্রক্রিয়াটি ডাক বিভাগের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে এবং নির্বাচনের দিন একসঙ্গে ভোট গণনা করা হবে।”
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদি পরিকল্পিত প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই প্রবাসীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন—যা হবে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
Reporter Name 













