
চান্দিনা মেইল অনলাইনঃ
জুলাই বিপ্লবের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেলেও সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক চোরাচালান রয়ে গেছে উদ্বেগজনকভাবে সক্রিয়। বিশেষ করে কুমিল্লা সীমান্তে গোমতী নদীপথ হয়ে ভারত থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য প্রবেশের ঘটনা বেড়েছে। মাদক কারবারিরা এখন নদীপথকে সহজ, নিরাপদ ও ব্যয়সাশ্রয়ী রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার বিবির বাজার স্থলবন্দর থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার ভেতরে ডাম্বুর বাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত নদীপথে মাঝেমধ্যেই ভেসে আসে বস্তা ও বোতল। সম্প্রতি কটক বাজার এলাকায় নদীর বেড়িবাঁধের কাছে একটি বস্তা ভেসে আসে, যা বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার করে। বস্তাটি খুললে দেখা যায়—ফেনসিডিল, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যে পূর্ণ বোতল। এসব জব্দ করে ধ্বংস করা হয়।
বিজিবি সদস্য এনামুল হক জানান, ভারতীয় মাদক কারবারিরা বিভিন্ন চিহ্নযুক্ত বস্তা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের মোবাইলে ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তারা নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে চালান সংগ্রহ করতে পারে। কখনো কলাগাছ, খালি বোতল বা মবিলের ড্রামের সঙ্গে মাদক বেঁধে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ পেয়ার আহমেদ বলেন, মাদকদ্রব্যগুলো পলিথিনে মুড়িয়ে বালু বা পাথর দিয়ে ভারী করে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। একটি খালি বোতলও সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে তা সহজে শনাক্ত করা যায়। কারবারিরা সংকেতের মাধ্যমে চালান বুঝে নেয়।
বিজিবি সদস্যরা জানান, নদীতে ভেসে থাকা বোতল বা বস্তা দেখলেই তারা তা সংগ্রহ করে যাচাই করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতেও অভিযান পরিচালিত হয়। স্রোতের তীব্রতা বেশি থাকলে মাদক চালান পাঠানোর প্রবণতা বাড়ে। প্রতিদিন ২০-৩০টি বোতল ও কলাগাছের ভেলা ধরে যাচাই করা হয়, যদিও সবগুলোতেই মাদক থাকে না।
বিজিবি সূত্রে আরও জানা যায়, স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া দূর থেকে এসে কেউ এসব চালান সংগ্রহ করতে পারে না। অনেক স্থানীয় ব্যক্তি সরাসরি মাদক কারবারে জড়িত।
কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসানাত বাবুল বলেন, সীমান্তে বিজিবি এবং অভ্যন্তরে পুলিশের সমন্বিত ভূমিকা ছাড়া মাদক চোরাচালান রোধ সম্ভব নয়। রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ও মাদক কারবারকে উৎসাহিত করছে। সদিচ্ছা থাকলে তরুণ সমাজকে এই অভিশাপ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন বলেন, “মাদক মানবজাতির কলঙ্ক। এটি পরিবার ও সমাজ ধ্বংস করে। বিএনপি এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে।”
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, “নদীপথে মাদক আসছে—এটি নতুন তথ্য। ছত্রখিল ফাঁড়ির ইনচার্জকে বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।”
কুমিল্লা ১০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, “বর্ষার সময় নদীপথে মাদক প্রবেশের চেষ্টা বাড়ে। বিজিবি সদস্যরা দুই পাড়ে সতর্ক অবস্থানে থাকেন। প্রয়োজনে টহল আরও বাড়ানো হবে।”
Reporter Name 












