
চান্দিনা মেইল অনলাইনঃ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ দিনকে দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে। একের পর এক ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে চালক, ব্যবসায়ী ও যাত্রীদের মাঝে। সম্প্রতি ২৬ জুলাই রাতে দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া এলাকায় প্রায় ৬০ লাখ টাকার কাপড় ভর্তি একটি কাভার্ডভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনা গোটা অঞ্চলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
ভুক্তভোগী চান্দিনার কাপড় ব্যবসায়ী তাপস মজুমদার জানান, “আমরা ১৮ জন ব্যবসায়ী মিলে বাবুরহাট থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকার কাপড় কিনে নিরাপদ ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে পাঠাই। কাভার্ডভ্যানটি বানিয়াপাড়ায় পৌঁছালে হঠাৎ একটি পিকআপ এসে গাড়ির গতিরোধ করে চালককে সরিয়ে দেয় এবং গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।” এ ঘটনায় নিরাপদ ট্রান্সপোর্টের পক্ষ থেকে দাউদকান্দি মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হলেও ২৯ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ মালামাল কিংবা গাড়ির কোনো খোঁজ দিতে পারেনি।
মহাসড়কে ডাকাতির ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী। প্রাইভেটকার চালক মেহেদী হাসান বলেন, “আমরা রাতে গৌরীপুর পার হলেই টেনশনে থাকি। টামটা, ইলিয়টগঞ্জ, তীরচর, গোমতা, নাওতলা, দোতলা ও কুরছাপ—এসব এলাকায় ডাকাতরা ওঁত পেতে থাকে। কখনো রড ছুড়ে, কখনো পিকআপ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করে।”
মাইক্রোবাস চালক সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ করেন, “ডাকাতরা ডাকাতির পর চালককে ‘মামা’ বা ‘ভাগিনা’ বলে সম্বোধন করে চলে যায়, এতে যাত্রীরা চালককেও ডাকাত দলের সদস্য বলে সন্দেহ করে। এমন ঘটনা চান্দিনাতেও ঘটেছে।”
এ বিষয়ে দাউদকান্দি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জুনায়েদ চৌধুরী জানান, “২৬ জুলাই রাতের কাভার্ডভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করছে। তবে অন্যান্য ঘটনা আমাদের জানা নেই।”
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খায়রুল আলম বলেন, “ঘটনার বিষয়ে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক সময় ভুক্তভোগীরা আমাদের কাছে না এলে জানা সম্ভব হয় না।”
তথ্য অনুসারে, ২০ জুলাই রাত ১২:৪৫ মিনিটে দাউদকান্দির টামটা এলাকায় ঢাকা থেকে ফেনীগামী একটি মাইক্রোবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ১৭ জুলাই রাত ৩টায় চান্দিনা ও দেবীদ্বারের কুরছাপ এলাকায় প্রবাসী বহনকারী মাইক্রোবাসে রড ছুড়ে ডাকাতি করা হয়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চান্দিনার কাঠেরপুল এলাকায় এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসককে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে দাউদকান্দিতে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
স্থানীয়দের দাবি, মহাসড়কের দাউদকান্দি টোলপ্লাজা থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকায় বিশেষ করে গৌরীপুর থেকে মাধাইয়া পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার অংশটি রাতের বেলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমন কোনো রাত নেই, যে রাতে ডাকাতি বা ছিনতাই হচ্ছে না। অধিকাংশ ঘটনা মামলার ঝামেলা এড়াতে থানায় জানানো হয় না। ফলে প্রকৃত চিত্র পুলিশের কাছেও অজানা থেকে যাচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে হাইওয়ে পুলিশের টহল জোরদার, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো এবং প্রতিটি ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
Reporter Name 











