সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার ঢাকাস্থ চান্দিনা ছাত্র কল্যাণ সমিতির ২০২৫–২৬ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা উইন্ডোজের বিকল্প অপারেটিং সিস্টেম আনছে গুগল, পিসিতেই মিলবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস: নিহত প্রায় ৬০০, নিখোঁজ শতাধিক দেবিদ্বারে গাঁজাসহ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক কুমিল্লা ফুডপান্ডায় নিয়োগ, অভিজ্ঞতা ছাড়াও আবেদনের সুযোগ বুড়িচংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ দুটি ঘর পুড়ে ছাই শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা অবস্থা ‘অপরিবর্তিত’ এখনও ‘শঙ্কামুক্ত নন’ বেগম খালেদা জিয়া মঞ্চে লাল গালিচার ব্যবহার কীভাবে এলো? জানুন এর ইতিহাস

স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়িতে হামলা, পুরনো বিরোধ নাকি ক্ষোভের বিস্ফোরণ?

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের মীরাখোলা গ্রামে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের শ্বশুরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাটি ৫ মে রাত আনুমানিক ১২টার পর সংঘটিত হয়। হামলাকারীরা বাড়ির মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট করে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করেছে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, রাত গভীরে ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি দল অতর্কিতভাবে বাড়িতে হামলা চালায়। সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রী হনুফা আক্তারের ভাই আলাউদ্দিন মুন্সি ও নাছির উদ্দিন মুন্সির বাড়িতে ঢুকে তারা ভাঙচুর চালায়।

এ সময় পরিবারের সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। ভাঙচুরে ঘরের আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও চারটি আলমারি থেকে প্রায় ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগ রয়েছে। আতঙ্কে দুই শিশু অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

ভুক্তভোগীরা জানায়, হামলার আগে বিকেলে একই গ্রামের কামাল নামের এক ব্যক্তি পাঁচ লাখ টাকা পাওয়ার দাবি নিয়ে লোকজনসহ বাড়িতে এসেছিলেন। বিষয়টি বুঝিয়ে বললেও রাতেই হামলা হয়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক কর্মী হামলায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।

ভুক্তভোগীরা হামলার জন্য লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-এর কর্মীদের দায়ী করলেও দলটির চান্দিনা উপজেলা সভাপতি একেএম সামছুল হক মাস্টার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এ ঘটনায় এলডিপির কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে অভিযুক্ত কামাল দাবি করেন, সাবেক মন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছিলেন। সরকারি রাস্তা ও খাল দখলের অভিযোগও তার বক্তব্যে উঠে আসে।

তিনি জানান রেলমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা সরকারি রাস্তার মধ্যে গেট তৈরি করে মানুষের চলাচলের পথের বিঘ্ন ঘটায়। প্রতিদিন রাত ৮ না হতেই তারা গেট বন্ধ করে দেয় যাতে করে সাধারণ মানুষ এ রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করতে পারে না। তাঁর ভাষ্য মতে, এলাকাবাসীর ক্ষোভ থেকেই এই হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

See also  অবস্থা 'অপরিবর্তিত' এখনও 'শঙ্কামুক্ত নন’ বেগম খালেদা জিয়া

চান্দিনা থানার ওসি জাবেদ উল ইসলাম জানান, ঘটনার পর ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারজনকে আটক করে। তিনি বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, সাবেক রেলমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। সরকারি সড়কের মাঝখানে গেট স্থাপন, খাল দখল করে দেয়াল নির্মাণের মত অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের। অনেকেই ভয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও, এ ঘটনায় স্থানীয় অসন্তোষ ও দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই ঘটনাটি শুধুই একটি পারিবারিক লেনদেন ঘিরে সংঘটিত ‘বাড়ির ঝামেলা’ নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। বরং এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় রাজনীতি, ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, সামাজিক অবিচার এবং সম্ভবত প্রশাসনিক দুর্বলতা।

হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো অপরাধ কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু এই ঘটনা স্থানীয় স্তরের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সামাজিক উত্তেজনার প্রতিফলনও হতে পারে।

তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে ঘটনার প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হবে। তবে ইতোমধ্যেই এই হামলা চান্দিনার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে গভীর আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার

স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়িতে হামলা, পুরনো বিরোধ নাকি ক্ষোভের বিস্ফোরণ?

৭ মে ২০২৫, ৫:৪৮

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের মীরাখোলা গ্রামে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের শ্বশুরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাটি ৫ মে রাত আনুমানিক ১২টার পর সংঘটিত হয়। হামলাকারীরা বাড়ির মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট করে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করেছে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, রাত গভীরে ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি দল অতর্কিতভাবে বাড়িতে হামলা চালায়। সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রী হনুফা আক্তারের ভাই আলাউদ্দিন মুন্সি ও নাছির উদ্দিন মুন্সির বাড়িতে ঢুকে তারা ভাঙচুর চালায়।

এ সময় পরিবারের সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। ভাঙচুরে ঘরের আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও চারটি আলমারি থেকে প্রায় ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগ রয়েছে। আতঙ্কে দুই শিশু অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

ভুক্তভোগীরা জানায়, হামলার আগে বিকেলে একই গ্রামের কামাল নামের এক ব্যক্তি পাঁচ লাখ টাকা পাওয়ার দাবি নিয়ে লোকজনসহ বাড়িতে এসেছিলেন। বিষয়টি বুঝিয়ে বললেও রাতেই হামলা হয়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক কর্মী হামলায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।

ভুক্তভোগীরা হামলার জন্য লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-এর কর্মীদের দায়ী করলেও দলটির চান্দিনা উপজেলা সভাপতি একেএম সামছুল হক মাস্টার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এ ঘটনায় এলডিপির কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে অভিযুক্ত কামাল দাবি করেন, সাবেক মন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছিলেন। সরকারি রাস্তা ও খাল দখলের অভিযোগও তার বক্তব্যে উঠে আসে।

তিনি জানান রেলমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা সরকারি রাস্তার মধ্যে গেট তৈরি করে মানুষের চলাচলের পথের বিঘ্ন ঘটায়। প্রতিদিন রাত ৮ না হতেই তারা গেট বন্ধ করে দেয় যাতে করে সাধারণ মানুষ এ রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করতে পারে না। তাঁর ভাষ্য মতে, এলাকাবাসীর ক্ষোভ থেকেই এই হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

See also  চান্দিনায় চুরির জেরে রাজনৈতিক দুই দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চিলোড়া বাজার

চান্দিনা থানার ওসি জাবেদ উল ইসলাম জানান, ঘটনার পর ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারজনকে আটক করে। তিনি বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, সাবেক রেলমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। সরকারি সড়কের মাঝখানে গেট স্থাপন, খাল দখল করে দেয়াল নির্মাণের মত অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের। অনেকেই ভয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও, এ ঘটনায় স্থানীয় অসন্তোষ ও দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই ঘটনাটি শুধুই একটি পারিবারিক লেনদেন ঘিরে সংঘটিত ‘বাড়ির ঝামেলা’ নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। বরং এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় রাজনীতি, ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, সামাজিক অবিচার এবং সম্ভবত প্রশাসনিক দুর্বলতা।

হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো অপরাধ কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু এই ঘটনা স্থানীয় স্তরের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সামাজিক উত্তেজনার প্রতিফলনও হতে পারে।

তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে ঘটনার প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হবে। তবে ইতোমধ্যেই এই হামলা চান্দিনার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে গভীর আলোচনার জন্ম দিয়েছে।